মেয়েটা কী সত্যি খারাপ? নিজের কাছেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম । নীলার মুখটা এতটা মায়াবী লাগছিলো কী বলবো আপনাদের? আমার চোখ দুটো আমি সরাতে পারছিলাম না ওর উপর থেকে। ওর উসকো খুসকো চুল আমাকে শিউরে দিলো। আমি একধারে ওর দিকে তাকিয়েই ছিলাম। অনেক ক্ষন তাকিয়ে থাকার পর নীলার ঘুম ভেঙে গেলো আর ও আমাকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটু অবাগ ও একটু লজ্জা ও পেলো।
!
!
আমাকে দেখা মাত্রই বললো আপনি কখন আসলেন? আমি কিছু বলছি না। একটু চুপ করে থেকে বললাম এই মাত্র। নীলা জিজ্ঞেস করলো খাবার খাবেন না? আমি একটু গম্ভীর ভাষায় বললাম না খিদে নেই আমার। নীলা মাথাটা নিচু করে ফেললো। আমি বললাম যান শুয়ে পরুন। আমি সোফাতে শুতে গেলাম। আসলে বিয়ের পর আমরা একবার ও এক খাটে শুতে পারিনি।বাসর ঘরে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর থেকে যা সব ঘটনা নিজের চোখে দেখলাম।
!
!
কিন্তু একটা বিষয় আমার বেশ অবাক লাগছে যে নীলা প্রেগনেন্ড এটা কী আমার বাবা জানতো? তবে তিনি কি সব জেনে শুনেই আমার সাথে নীলার বিয়েটা দিলেন? বাবাকে এসব কিছু বলতে হবে। দেখি ওনি কী বলেন। আমি শুতে যাওয়ার আগে খেয়াল করলাম নীলার গালটা ফুলে গেছে। ৫ টা আঙ্গুলের দাগ বসে গেছে। বসে যাওয়ার ই কথা, চড়টা বেশ শক্ত করেই মেরেছিলাম।
!
!
এখন নিজের কাছে নিজেরই খুব খারাপ লাগছে। নীলাকে চড় মারাটা আমার উচিত হয়নি। আসলে তখন নিজেকে কনট্রোল করতে পারিনি। মাথাটা গরম হয়ে গিয়েছিলো। আমি আবার উঠে নীলার কাছে গেলাম। আর ওকে ডাকলাম। বললাম এই যে শুনছেন? নীলা চোখ খুললো আর বললো কিছু বলবেন?আমি বললাম মানে সকালে আপনাকে মারাটা আমার উচিৎ হয়নি।
!
!
নীলা একটু মুচকি হেসে বললো ঠিক আছে সমস্যা নেই। আমার গায়ে হাত তুলার অধিকার আপনার আছে। কিছুই মনে করিনি আমি। ও আরো বললো আপনার কোন দোষ নেই। সব দোষ ত আমার। আপনাকে না জানিয়ে আপনার সাথে বিয়ে দেওয়াটা সত্যি খুব অন্যায় হয়েছে। কথা গুলো খুব কষ্টে নীলা বললো। আর বলেই কেঁদেঁ ফেললো।আমার খুব খারাপ লাগছিলো।
!
!
নীলা আমাকে বললো যান শুয়ে পরুন। অনেক রাত হয়ে গেছে। আমি আর কথা না বলে সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলাম। খুব সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গলো। আমি তারা তারি উঠে ফ্রেস হয়ে নামাজ পরে নিলাম। মা বার বার আমাকে এবং নীলাকে খাবার টেবিলে যাওয়ার জন্য ডাকছে। আমি নীলাকে ডাকলাম। দেখলাম নীলা রোমের এক কোনে শাড়ি হাতে দাড়িয়ে আছে।
!
!
আমি নীলার কাছে গেলাম আর ওকে জিজ্ঞেস করলাম কী বেপার এই ভাবে শাড়ী হাতে এখানে দাঁড়িয়ে থাকার মানে কী? নীলা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আমি এবার একটু গম্ভীর ভাষায় বললাম কথা বলছেন না কেন? নীলা বললো শাড়ী পরতে হবে। আমি বললাম তো পড়েন মানা করলো কে? নীলা মাথা নিচু করে বললো সে শাড়ী পরতে পারে না।আমি বুঝলাম না এখন রাগ করবো নাকী হাসাবো?
!
!
আমি বললাম কই শাড়ী টা দিনতো দেখি?আমি নীলার হাত থেকে শাড়ী টা নিয়ে নিলাম। আর বললাম সুজা হয়ে দাড়ান। আমি নীলাকে শাড়ীটা পরিয়ে দিলাম। আমি শাড়ী পরানোর সময় নীলা ওর চোখ বন্ধ করেছিলো। আমি ওকে শাড়ী পরিয়ে খাবার ঘরে নিয়ে এলাম। মা জিজ্ঞেস করলো এতো দেরি হলো কেন? আমি বললাম এমনি মা। খাওয়া দাওয়া শেষ করে অফিসের দিকে গেলাম।
!
!
অফিসে একটা জুরুরি কাজ আছে বলে বস ফোন করে ডেকে নিয়ে গেলো। অফিসের কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেলো। বাইরে বৃষ্টি ও শুরু হয়ে গেছে।আমি বৃষ্টিতে ভিজেই বাড়ি ফিরলাম। আর আমার রোমে ঢুকেই দেখলাম নীলা জানালার পাশে দাড়িয়ে অঝর ধারাই কান্না করছে। আমি গিয়ে কাঁদে হাত রাখলাম আর জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে? কাঁদছেন কেন?
!
!
নীলা চোখের পানি মুছে আস্তে আস্তে বললো আজ আমার সব চাইতে কষ্টের দিন।আজকের এই দিনি আমি আমার সব চাইতে প্রিয় জিনিস টা হারিয়েছিলাম! তৎক্ষনাৎ বিদ্যুৎ চমকে উঠলো আর নীলা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।